বাংলাদেশর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত সেলসিয়াস
বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে পরিমাপ করা হয়েছিল । এই তাপমাত্রা দেশের স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে বিবেচিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে যশোরে তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল, যা গত ৫২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD) দেশের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা, যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয় । এর প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত এবং এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, রাডার ও স্যাটেলাইট স্টেশন, কৃষি-মৌসুম পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, ভূ-চৌম্বক ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালনা করে ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মূল দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে:
দৈনিক ও দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদান।
ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস ও সতর্কতা জারি।
কৃষি, বিমান চলাচল, নৌপরিবহন এবং অন্যান্য খাতে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ।
আবহাওয়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষণা ও তথ্য সংরক্ষণ।
BMD দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। এই তথ্যগুলো স্যাটেলাইট ও রাডার ডেটার সঙ্গে মিলিয়ে বিশ্লেষণ করে পূর্বাভাস তৈরি করা হয়। এছাড়া, অধিদপ্তরটি ভূকম্পন ও ভূ-চৌম্বকীয় তথ্যও সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে থাকে ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (www.bmd.gov.bd) এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণ দৈনিক আবহাওয়া পূর্বাভাস, সতর্কতা, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং অন্যান্য আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সহজেই জানতে পারেন। এছাড়া, কৃষকদের জন্য বিশেষ কৃষি-মৌসুম পূর্বাভাসও প্রদান করা হয়, যা তাদের কৃষিকাজে সহায়তা করে ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য প্রদান ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ফলে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেয়ে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারি, যা জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সহায়তা করে।
বিভিন্ন দেশের তাপমাত্রা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তাপমাত্রা চরম বৈচিত্র্যের মধ্যে দিয়ে যায়, যা প্রাকৃতিক পরিবেশ, ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে। কিছু দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম স্থান হিসেবে পরিচিত, আবার কিছু দেশ চরম শীতলতার জন্য বিখ্যাত।
🌡️ সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড
যুক্তরাষ্ট্র (Death Valley, ক্যালিফোর্নিয়া): পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯১৩ সালের ১০ জুলাই, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে, যেখানে তাপমাত্রা ছিল ৫৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুয়েত (Mitribah): ২০১৬ সালের জুলাই মাসে, কুয়েতের মিত্রিবাহ শহরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫৪.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মধ্যপ্রাচ্যের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে বিবেচিত।
পাকিস্তান (Nawabshah): ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে, পাকিস্তানের নবাবশাহ শহরে তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৫০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এপ্রিল মাসে বিশ্বের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।
ইরান (Bandar Mahshahr): ২০১৫ সালের জুলাই মাসে, ইরানের বান্দার মাহশাহর শহরে তাপমাত্রা ছিল ৪৬.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তবে উচ্চ আর্দ্রতার কারণে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল ৭৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
❄️ সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড
অ্যান্টার্কটিকা (Vostok Station): পৃথিবীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৮৩ সালের ২১ জুলাই, অ্যান্টার্কটিকার ভোস্টক স্টেশনে, যেখানে তাপমাত্রা ছিল -৮৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাশিয়া (Oymyakon): রাশিয়ার ওইমিয়াকন গ্রামটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল বসবাসযোগ্য স্থান হিসেবে পরিচিত, যেখানে ১৯৩৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল -৬৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কানাডা (Snag, Yukon): ১৯৪৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, কানাডার ইউকনের স্ন্যাগ শহরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল -৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা উত্তর আমেরিকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে বিবেচিত।
সুইডেন (Vuoggatjålme): ১৯৬৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, সুইডেনের ভুগাতজলমে শহরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল -৫২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সুইডেনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
🌍 জলবায়ু পরিবর্তন ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার চরমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উচ্চ তাপমাত্রা ও তাপপ্রবাহের কারণে মানব স্বাস্থ্য, কৃষি উৎপাদন ও পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তাপপ্রবাহের ঘটনা বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে এই অঞ্চলগুলিকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলতে পারে।
অন্যদিকে, চরম শীতলতা ও বরফ গলার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা উপকূলীয় অঞ্চলগুলিকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক উদ্যোগ ও স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি।
সার্বিকভাবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তাপমাত্রার চরমতা আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা ও তার প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও টেকসই উন্নয়ন নীতিমালা গ্রহণ অপরিহার্য।