bangladeshi newspaper online how to earn money online for students

বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনলাইনে আয় করা একটি বাস্তব ও কার্যকর সম্ভাবনা, বিশেষ করে ছাত্রদের জন্য। শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি বাড়তি আয় করার সুযোগ অনেক শিক্ষার্থীকে স্বাবলম্বী করে তুলছে এবং পরিবারের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছে। প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষতা থাকলে একজন শিক্ষার্থী সহজেই নিজের পড়াশোনার ফাঁকে অনলাইন থেকে আয়ের পথ তৈরি করতে পারে। তবে সঠিক দিক নির্দেশনা ও পরিশ্রম ছাড়া তা সম্ভব নয়। ছাত্রদের জন্য সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় ইনকাম সোর্সগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন টিউশনি, কনটেন্ট রাইটিং, ইউটিউব, অনলাইন কোর্স তৈরি, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ড্রপশিপিং, গ্রাফিক ডিজাইনিং, ভিডিও এডিটিং, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ, মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ব্লগিং ইত্যাদি।

প্রথমেই বলা যায় ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা। ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন আয়ের মাধ্যম। এটি এমন একটি পেশা যেখানে আপনি নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে, নিজে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কাজ গ্রহণ করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। একজন ছাত্র যদি গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ডাটা এন্ট্রি কিংবা অনুবাদ ইত্যাদির যেকোনো একটি বা একাধিক স্কিল আয়ত্তে আনেন, তাহলে তিনি Fiverr, Upwork, Freelancer, PeoplePerHour, বা Guru.com ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে নিজের প্রোফাইল খুলে কাজ শুরু করতে পারেন। এখান থেকে আয় শুরু করতে কিছুটা সময় ও ধৈর্য প্রয়োজন হলেও একবার ভালো রেটিং ও রিভিউ পেলে কাজের অভাব হয় না।

দ্বিতীয়ত, অনলাইন টিউশনি একটি কার্যকর ও সম্মানজনক উপার্জনের পথ। অনেক ছাত্রই ভালো পড়াশোনা জানে এবং স্কুল, কলেজ বা ভার্সিটির নীচের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের শেখানোর যোগ্যতা রাখে। আজকাল Zoom, Google Meet, Skype ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে ঘরে বসে পড়ানো যায়। Teachmint, MyTutor, Chegg Tutors, Preply ইত্যাদি সাইটে প্রোফাইল খুলে শিক্ষার্থীরা নিজের সময় অনুযায়ী অনলাইন টিউশনি করতে পারে। ইংরেজিতে ভালো দখল থাকলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ইংলিশ শেখানো বা অ্যাসাইনমেন্টে সাহায্য করেও অর্থ উপার্জন করা যায়।

তৃতীয়ত, কনটেন্ট রাইটিং বা আর্টিকেল লেখা। বাংলা বা ইংরেজি যেকোনো ভাষায় লেখায় দক্ষতা থাকলে, শিক্ষার্থীরা ব্লগ পোস্ট, ওয়েবসাইট কনটেন্ট, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, SEO কনটেন্ট, প্রোডাক্ট রিভিউ ইত্যাদি লিখে ইনকাম করতে পারে। ContentMart, iWriter, Textbroker, অথবা ফেসবুকের বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং গ্রুপেও কাজ পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল বা ম্যাগাজিনে লেখালেখি করে সম্মানী পাওয়া যায়।

ইউটিউব হলো আরও একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম অনলাইনে আয়ের জন্য। যদি কেউ ভিডিও বানাতে ভালোবাসে এবং নিজের একটি নির্দিষ্ট নিস (যেমন: টেকনোলজি, ভ্লগ, পড়াশোনা, রেসিপি, ফান, রিভিউ, এনিমেশন ইত্যাদি) নিয়ে নিয়মিত ভিডিও তৈরি করতে পারে, তবে YouTube Channel খুলে Google AdSense এর মাধ্যমে আয় শুরু করা যায়। তবে ইউটিউব থেকে আয় শুরু করতে হলে কমপক্ষে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম লাগবে। এছাড়াও স্পন্সরশিপ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও প্রোডাক্ট প্রমোশন থেকেও আয় সম্ভব।

অনলাইন কোর্স তৈরি করে এবং তা বিভিন্ন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মে আপলোড করে শিক্ষার্থীরা আয় করতে পারে। Udemy, Skillshare, Coursera ইত্যাদি সাইটে নিজের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে কোর্স তৈরি করা যায়। যেমন ধরুন, যদি কেউ প্রোগ্রামিং, ডিজাইনিং, বা ভিডিও এডিটিং ভালো জানে, সে একটি কোর্স বানিয়ে তা বিক্রি করতে পারে। একবার কোর্স বানিয়ে দিলে তা থেকে দীর্ঘ সময় ধরে প্যাসিভ ইনকাম হতে পারে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংও ছাত্রদের জন্য চমৎকার একটি প্যাসিভ ইনকাম সোর্স। এখানে আপনি অন্য কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রমোট করেন এবং আপনার লিংকের মাধ্যমে কেউ যদি সেই প্রোডাক্ট ক্রয় করে, তাহলে আপনি কমিশন পান। Amazon, Daraz, ClickBank, ShareASale, Affiliate.BD ইত্যাদি জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট প্ল্যাটফর্ম। এজন্য নিজের একটি ব্লগ, ইউটিউব চ্যানেল, অথবা ফেসবুক পেজ থাকা ভালো।

গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এমন কিছু স্কিল যা শিক্ষার্থীরা সহজে অনলাইনে শিখে আয় করতে পারে। Canva, Photoshop, Illustrator, Premiere Pro, DaVinci Resolve, HTML, CSS, JavaScript, WordPress – এসব টুল বা প্রযুক্তিতে দক্ষতা থাকলে Fiverr বা Upwork ছাড়াও ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ বা স্থানীয় ক্লায়েন্টের মাধ্যমে কাজ পাওয়া যায়।

ড্রপশিপিং হলো এমন একটি ব্যবসা যেখানে নিজের কোনো প্রোডাক্ট ছাড়াই অনলাইনে দোকান খোলা যায় এবং প্রোডাক্ট অর্ডার আসলে সরাসরি থার্ড-পার্টি সাপ্লায়ার প্রোডাক্ট পাঠায়। Shopify, WooCommerce, Aliexpress ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম দিয়ে ড্রপশিপিং করা যায়। শিক্ষার্থীরা চাইলে এটি পার্ট-টাইম হিসেবে করতে পারে, তবে শুরুতে কিছু শেখা ও সময় দেওয়া প্রয়োজন।

ব্লগিংও শিক্ষার্থীদের জন্য দারুণ এক প্যাসিভ ইনকাম সোর্স হতে পারে। নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নিয়মিত মানসম্মত কনটেন্ট দিলে Google AdSense, স্পন্সরশিপ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, গেস্ট পোস্ট ইত্যাদির মাধ্যমে আয় করা যায়। ব্লগের বিষয় হিসেবে টেকনোলজি, শিক্ষা, ক্যারিয়ার টিপস, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, রিভিউ ইত্যাদি বেছে নেওয়া যেতে পারে।

একজন শিক্ষার্থী চাইলে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করতে পারে। এখানে কাজগুলো হয় কোনো ব্যবসা বা উদ্যোক্তার পক্ষে ইমেইল চেক করা, ডেটা এন্ট্রি, সিডিউল মেইন্টেইন করা, কল করা, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজ করা ইত্যাদি। Fiverr বা Upwork এ VA (Virtual Assistant) ক্যাটাগরিতে অনেক কাজ থাকে।

তবে অনলাইন ইনকামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দক্ষতা অর্জন ও আত্মবিশ্বাস। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা হুটহাট কোনো পদ্ধতিতে নাম লেখায় কিন্তু ধৈর্য না থাকায় অল্প সময়েই হতাশ হয়ে পড়ে। অনলাইন থেকে অর্থ আয় করতে হলে আগে অন্তত একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে হবে, প্রতিনিয়ত শিখতে হবে, অনুশীলন করতে হবে। ফ্রি কোর্স করার জন্য YouTube, Coursera, edX, Udemy, Khan Academy, Google Digital Garage ইত্যাদি সাইট রয়েছে। সময়ের সঠিক ব্যবহার এবং নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে অনলাইন ইনকামকে শিক্ষার্থীরা উপার্জনের অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত করতে পারে।

সবশেষে বলা যায়, অনলাইন ইনকাম কোনো মিরাকল নয় – এটি কঠোর পরিশ্রম, নিয়মিততা, ও সময় ব্যবস্থাপনার ফলাফল। একজন ছাত্র যদি প্রতিদিন ২-৩ ঘন্টা করে একটি নির্দিষ্ট স্কিল শেখা এবং প্রয়োগের জন্য বরাদ্দ করে, তাহলে এক বছরের মধ্যেই সে অনলাইন থেকে নিয়মিত একটি ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করতে সক্ষম হবে। এতে করে সে পড়াশোনার পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে, নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে, এমনকি ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্ত ভিত্তিও গড়ে তুলতে পারবে।

প্রয়োজনে আপনি এটি Word বা PDF ফাইলেও নিতে পারেন। চাইলে আমি সেটি তৈরি করে দিতে পারি।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post