online news portal bangladesh

 online news portal bangladesh:



বর্তমানে বাংলাদেশের আকাশ আંধারের আবহাওয়া বিরাজ করছে, এখানে আর্দ্রতা অনেক বেশি ও তাপমাত্রা প্রায় ৩৩°C এর কাছাকাছি, সাথে বৃষ্টির সঙ্গে আংশিক মেঘলা পরিবেশ চলছে । এই ধরণের পরিস্থিতি তাপ বাড়ায় এবং বায়ুতে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ধরে রাখে, যা বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি, বন্যা, ভূমিকম্প এবং সাইক্লোনের প্রবণতা বাড়ায়। জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ভৌগোলিক এবং সামাজিক কাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলছে। নিচে সেটির মূল দিকগুলো তুলে ধরা হলো:


---

১. তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও চরম তাপপ্রবাহ

গত কয়েক বছর ধরে উত্তরের অংশে তাপমাত্রা ৪৩.৮ °C-তে পৌঁছেছে, যা ১৯৪৮ সাল থেকে রেকর্ডকৃত তাপমাত্রার চেয়ে ১৬ °C বেশি । এ ধরনের তীব্র তাপের কারণে স্কুল বন্ধ, শিশুদের স্বাস্থ্যহানি, কৃষি চাষে ব্যাঘাত, গুণগতমানের খাদ্য উৎপাদনে বিঘ্ন এবং শহরে ‘Urban Heat Island’ তৈরি হচ্ছে। তাপপ্রবাহ থেকে উদ্ভূত স্বাস্থ্যজটিলতাগুলোর মধ্যে রয়েছে হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, নেত্রজোড়ার সমস্যা, গরিব ও বৃদ্ধ মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, এবং চাকরিহীনতা বৃদ্ধি।

২. বন্যা ও অস্থায়ী খরা (Erratic Rainfall)

মুনসুন মৌসুমে ভারি বর্ষণ আধুনিক বন্যার মূল কারণ হয়েছে—যার ফলে নদী তীর পরিবর্তন, ধ্বংসাত্মক বন্যা, কৃষি জমি প্লাবিত, ঘরবাড়ি ধ্বংস হচ্ছে । অন্য দিকে, অনির্দিষ্ট বর্ষণের ফলে বিভিন্ন সময়ে খরা দেখা দেয়, যা আমন, বোরো, আউস চাষকে প্রভাবিত করে । জুলাই ২০২১-এ ২৫% এলাকা প্লাবিত হয়েছিল; এ ঘটনা কৃষিজীবন ও জীবনধারাকে বিপর্যস্ত করেছে ।

৩. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও তত্বাক্ত প্রবেশ (Salinity Intrusion)

বাংলাদেশের ৬০–৬৬% এলাকা সমুদ্রস্তরের ১৫ ফুটের নিচে অবস্থিত । সমুদ্রপৃষ্ঠের ধীরে ধীরে উচ্চতার ফলে উপকূলীয় অঞ্চল লুপ্ত হওয়া, লবণাক্ত পানি চাষযোগ্য জমিতে ঢুকে মাটির উর্বরতা ও মিঠা পানির উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । এক মিলিয়নের অধিক হেক্টর জমি এতে প্রভাবিত হয় । লোকপ্রচলিত কথা অনুযায়ী, “দেখতে পাওয়া যায় – এতদিনে পানিটাও সামুদ্রিক স্বাদের” ।

৪. চক্রবায়ু ও ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি

সাইক্লোন “আমফান-২০২০” ও “সিত্রাং-২০২২”–এর মতো শক্তিশালী ঝড়ের কারণে কোটি মানুষ অস্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত হয়, উপকূলীয় অবকাঠামো ধ্বংস, মৃতুঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি এসেছে । সাইক্লোনের সঙ্গে সৃষ্ট ঝড়-জোয়ারের উচ্চতা (storm tide) প্রায় ৪–৫ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, যা মানুষের বাসস্থান ও ফসলের জন্য হুমকিস্বরূপ ।

৫. ম্যানগ্রোভ বন ও সান্দেরবন

সান্দেরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, যা বন্যা ও সাইক্লোন থেকে প্রাকৃতিক বাঁধের কাজ করে। উচ্চ সমুদ্রস্তর, লবণাক্ততা ও বন কাটার কারণে সান্দেরবনের ৭৫% বনগ্রাস হুমকির মুখে । ২০১০ সাল থেকে ২০০ মিটার পর্যন্ত প্রবাল সৈকত পাড়াহারা হচ্ছে ।

৬. কৃষি ও খাদ্য সঙ্কট

কৃষিক্ষেত্র এখন অনিশ্চিত: আর এক বছরে তিন ফসল নয়, দুইও কষ্টে মিলছে । তাপ, সামুদ্রিক লবণাক্ততা, বন্যা ও খরা–এসব কারণ রাইস, সবজি উৎপাদনে ২০–৩০% পর্যন্ত পতান করছে । ফলস্বরূপ, কৃষি-নির্ভর গ্রামীণ সমাজে ফসলিক সংকট, খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা, আর্থ-সামাজিক দুর্বলতা বৃদ্ধি এবং শহরে অভিবাসন বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে ।

৭. মৎস্য খাত ও পানির প্রাণি

পদ্মা–মেঘনা–যমুনা নদীজালিকা অঞ্চল বর্তমানে লবণাক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে হিলসা, চিংড়ি ইত্যাদি মাছের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে, মৎস্য ব্যবসায়ী ও গ্রামীণ জনজীবনে প্রভাব ফেলছে । এ খাতে সংসার চালানো লোকের আয় অর্ধেকে নামতে পারে ।

৮. স্বাস্থ্য সংকট

জলবায়ু-জনিত রোগ যেমন হেঁটো, কলেরা, টাইফয়েড, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাপপ্রবাহ ও প্লাবিত এলাকার জীবাণুমুক্ত না হওয়ার কারণে হাঁপানি, রক্ত চাপ বৃদ্ধি, গর্ভাবস্থায় গাইনোকলজিক সমস্যা ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা যাচ্ছে ।

৯. অভ্যন্তরীণ স্থানান্তর ও শহুরে চাপ

প্রতি বছর প্রায় ৫০,০০০ লোক নদী ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, প্লাবিত ও ঘরবাড়ি ধ্বংসের কারণে অনেকেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ইত্যাদি শহরে অভিবাসী হচ্ছে । এটি শহুরে দারিদ্র্য, স্লাম তৈরি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলছে।

১০. সামাজিক ও লিঙ্গগত প্রভাব

নারীরা জলবায়ু ঝড়, তাপ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বেশি ঝুঁকিতে – যেমন গর্ভাবস্থায় জটিলতা, গৃহহার্সিকতা ও স্নানযোগ্য পানির অভাবে শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধির ঝুঁকি ।


---

প্রতিরোধ ও অভিযোজন

বাংলাদেশে রয়েছে নানা উদ্যোগ ও উদ্ভাবনী কৌশল:

বায়রা (Floating gardens): বন্যার সময়ে ভাসমান শস্য খোপে সবজি চাষের প্রথা, FAO-র GIAHS স্বীকৃত ব্যবস্থা ।

পারিপার্শ্বিক অবকাঠামো: সাইক্লোন শেল্টার, বাঁধ, উন্নত ড্রেনেজ, ও মানগ্রোভ রিবিল্ডিংয়ের মাধ্যমে আঞ্চলিক ঝুঁকি হ্রাস করা হচ্ছে ।

जलवायु সহিষ্ণু কৃষি: লবণ সহনশীল ফসলের জাত, রেইনওয়াটার হ্যার্ভেস্টিং ও ডিআইএসএম–ভিত্তি চাষ প্রযুক্তি গ্রহণ করা হচ্ছে ।

শিক্ষা ও সচেতনতা: সমাজ-ভিত্তিক কর্মশালা, স্থানীয় নেতৃত্বে প্রস্তুতি ও সচেতনতা বৃদ্ধি। বিশেষত নারীদের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ চালু ।

জাতীয় পরিকল্পনা: Delta Plan 2100, National Adaptation Plan ও সিটি–ড্রেইনেজ রূপায়ণ চলছে ।



---

চ্যালেঞ্জ ও পথঃ

তবুও বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে: আর্থিক সংকট, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, নৈতিক ও শর্তসাপেক্ষ অর্থায়ন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অভাব । দ্রুত ও দৃঢ় উদ্যোগ জরুরি—বিশ্বপ্রেক্ষাপটে ন্যায়সঙ্গত অর্থায়ন, গ্রিন রিনিউয়েবল শক্তির দিকে অগ্রসর, এবং কাঠামোগত ডায়াক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স গঠন।


---

উপসংহার

সুতরাং, বাংলাদেশের বর্তমান আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত পরিস্থিতি—বর্ষাকালীন মেঘলা ও বৃষ্টি ভেজা, অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও উচ্চ তাপমাত্রা—জলবায়ু পরিবর্তনের সিগন্যাল। বিদ্যমান বৈশ্বিক উষ্ণতা, মোনসুনের অস্থিরতা ও আন্তর্জাতিক উদাসীনতার মধ্যে, পরিবেশে ফসল, বাস্তুসংস্থান, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তবে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, কর্মজীবী সমাজ, সরকারী পালিষি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব। আর্থিক সহায়তা, জলবায়ু ন্যায়নীতি ও সবুজ শক্তি গ্রহণ, ও ‍‘বাস্তব ভিত্তিক’ পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা শুধু টিকে থাকতে পারব না, বরং পৃথিবীর জন্য একটি নমুনা প্রতিষ্ঠা করতে পারব – যেখানে সংকট বদলে যাবে সম্মিলিত প্রতিবাদের শক্তিতে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post