Bank news in banglades:
বাংলাদেশ ব্যাংকে মূলত পুঁজির ঘাটতি, দেউলিয়া ব্যাংক সংলগ্ন সমস্যা, অসাধু ঋণ, আর্থিক সংস্কার, রিজার্ভ অবস্থা, প্রাথমিক পদক্ষেপ ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ আলোচিত হয়েছে:
---
বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত একটি একাধিক সংকট ও প্রগতির মাত্রা অতিক্রম করছে, যেখানে পুঁজির ঘাটতি, উচ্চ অনৈতিক ঋণ (Non‑Performing Loans বা NPL), অস্মৃতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ একাধিক স্তরে প্রভাব ফেলছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত, ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত তরল সম্পদে ঢেকেছে—২০২৪ সালের জুন-ফেব্রুয়ারি সময়কালে তরল সম্পদের পরিমাণ বেড়ে Tk 5.39 ট্রিলিয়ন ও অতিরিক্ত তরল সম্পদ Tk 2.53 ট্রিলিয়ন (SLR ও CRR-এর বাহিরে থাকা)—যা উৎপাদনশীল লোনে বিনিয়োগ না করে অপেক্ষমাণ রেডি় চিত্রকে স্পষ্ট করে । যদিও এই উচ্চ তরলতা সামান্য শিথিলতা বোঝায়, তবে এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যবহারিক ঋণের অনুপস্থিতিকে চিত্রিত করে।
ঋণগ্রহীতাদের মাঝে বিনিয়োগের হ্রাসে ছোবল পড়ছে—FY25-এর প্রথম আট মাসে ব্যক্তিগত খাতে ঋণ বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র 2.63%, যা গত বছরের সমান্তরালে প্রায় 5.53% ছিল, এবং এটি গত ২১ বছরে সর্বনিম্ন । এটি কেবল উচ্চ সুদের হার (৯–১৬% পর্যন্ত) ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে নয়, বরং ব্যবসায়িক পরিবেশ সংকটের প্রতিফলন—যেখানে ঋণ বাড়ানোর বদলে ব্যাংকগুলো সরকারের ট্রেজারি বন্ডে ঝুঁকছে আন্তরিক করতে উচ্চ রিটার্ন (১১–১৩%) ।
সম্পদ-গুণমানের ডিগবাজি—NPL হার ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পৌছে গেছে ২০.২% (Q4 এর মধ্যে ১৬.৯%–এর তুলনায়) । এই ঋণগুলি মূলত ভুয়া ক্রেডিট রিপোর্ট, পলিসি প্রিফরিয়ারিত্ব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রয়োজনে পুনঃসূচিবদ্ধ ঋণের কারণে। NPL-এর এই অবস্থা আগামী ২০২৫ সালেও ২০–৩০% পর্যন্ত বজায় থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে । বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক সংস্থার মতে, NPL নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাংক রিস্রাকচারিংই এখন অতি জরুরি ।
পুঁজির ঘাটতি (Capital Adequacy Crisis) আরও জঘন্যভাবে দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালের শেষদিকে CRAR ব্যাংকগুলোতে নেমে গেছে মাত্র 3.08% (ব্যবস্থাপনযোগ্য Basel III–এর 10%-এর বিপরীতে) । বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে CRAR ঋণাত্মক –8.4% অতিক্রম করেছে, যেখানে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক কিছুটা ভালো রাখছে (~11%)। তবে এই সামগ্রিক অবস্থা ব্যাংকিং সিস্টেমের স্থায়িত্বের জন্য বিপজ্জনক । এই সংকট ব্যাঙ্কগুলোকে ঋণ দেওয়া থেকে বিরত রেখেছে এবং ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য ঋণের অভাব সৃষ্টি করছে ।
এই পুঁজির ঘাটতি সমাধানে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি সমস্যাযুক্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করেছে, ও বন্ধনহীন অর্থের মাধ্যমে Tk 28,000 কোটি ঋণ তরলতা নিশ্চিতে চালু করেছে । ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (FIU) ৫০০ জনের বিরুদ্ধে সুবিধাভোগী চ্যানেল অতিক্রমে মামলা চালিয়েছে এবং Tk 14,500 কোটি মূল্যমানের সম্পদ হিমায়িত করেছে । এছাড়া, বাংলাদেশের বিরতি-মূল্য রূপে IMF, ADB ও বিশ্বব্যাংক থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছে, যার ফলে জুন ২০২৫ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে $২৬.৮২ বিলিয়ন (গ্রস), IMF ভিত্তিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ $২১.৮৪ বিলিয়ন, এবং নিট রিজার্ভ প্রায় $১৬ বিলিয়ন । এই পরিমাপ আগামী তিন মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহী সক্ষমতা যুক্ত করে প্রশান্তিপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
ব্যাংকিং খাতের সংস্কার পরিকল্পনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক Big Four (EY, Deloitte, KPMG)-এর মাধ্যমে ব্যাপক AQR (Asset Quality Review) এর উদ্যোগ নিয়েছে, Tk 17 বিলিয়ন (~Tk ২ ট্রিলিয়ন) সেলানো সম্পদের তদন্ত শুরু করেছে এবং ১১টি JIT গঠন করেছে । এই অভিযান চিহ্নিত করেছে ১০টি বৃহত্তর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতিবিদের—বিশেষ করে S Alam গ্রুপ—এর বিরুদ্ধে । স্পষ্টভাবে বলা হয় যে, "My target is those who have looted my banks", অর্থাৎ ব্যাংকিং ব্যবস্থার অবক্ষয় যারা করেছেন, তাদের ধরা হবে ।
পুনর্গঠন উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাংক ১০-পয়েন্ট রেস্কিউ প্ল্যান প্রস্তাব করেছে—যাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পুনর্লাভ, NPL ব্যবস্থাপনা কাঠামো, দেউলিয়া আইন প্রণয়ন, ব্যাংক রিএসল্যুশন কাঠামো, আমানত বীমা সুবিধা, তত্ত্বাবধান উন্নয়ন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা জোরদার অন্তর্ভুক্ত । অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মহল মনে করেন এগুলো দ্রুত নীতিগত প্রয়োগ না হলে ক্ষতি অমোচনীয় হতে পারে ।
প্রাতিষ্ঠানিক তথা আইনি সংস্কারের অংশ হিসেবে, ২০২৪–২০২৫ সময়কালে সমিতি–সংস্থা পরিমার্জন কমিশন গঠিত হয়েছে, যার মধ্যে একটি ৬ সদস্যের টাস্কফোর্স ব্যাংকিং খাত সংস্কার ও AQR–এর দায়িত্বে নিয়োজিত—এর প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ডঃ আহসান এইচ মনসুর । কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নতুন নির্দেশিকা—Bank Resolution Ordinance—ও লোন শ্রেণিবিন্যাস ও প্রভিশনিং পদ্ধতির (Expected Credit Loss পদ্ধতি) সংস্কারের পরিকল্পনা ২০২৭ সাল নাগাদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নির্ধারিত হয়েছে । এছাড়া চার্জ খামার/বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট নিয়ন্ত্রণে সংস্কার চালু করা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বসতি ও সংস্কারের দ্বন্দ্ব চলছে: আগস্ট ২০২৪ এর ছাত্র-উদ্দামিতার ভিত্তিতে শেখ হাসিনা সরকারের পরিবর্তনের পর যুবনেতা মুহাম্মদ ইউনুস–নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে সাংবিধানিক ও আর্থিক সংস্কার শুরু করেছে। তবে NBR স্ট্রাইক, রাজস্ব বিভাগের পুনর্গঠন ও কাস্টমস–ভ্যাট ব্যহত হওয়ায় কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে । এছাড়া ক্যাশ–ATM নিরাপত্তা ও নগদ সীমাবদ্ধতার নির্দেশ প্রেক্ষাপটে (প্রতি অ্যাকাউন্ট Tk 200,000 সীমা) ব্যাংকিং অপারেশনেও প্রভাব পড়েছে । এসব পদক্ষেপ স্থায়িত্ব আনলেও বিনিয়োগের অবনতি ও নীতিগত অনিশ্চয়তা বিষয়ক প্রশ্ন অগ্রাহ্য করা যাচ্ছে না।
রাজস্ব–ঋণ মেরামত পদক্ষেপ (পেপারার্ক–forgiveness/ forbearance) ও ছয় ব্যাংকের পুনরুদ্ধার যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ—গভর্নরের নির্দেশনায় নিষিদ্ধ ব্যাংকের Md, Bd রিসেট হয়েছে, Six banks (যেমন Islami Bank, Social Islami Bank, Exim, UCB, IFIC, Al-Arafah) পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেয়েছে, Tk 30,000 কোটি ইনজেকশন ও সুদ সহায়তা ছাড়াই । তবে NPL বালি বের হওয়ায় আগমনীয় লাভে চাপ পড়বে—যা ব্যাংকের আয় ও পুনঃপ্রভিশন–সক্ষমতায় চ্যালেঞ্জ আনবে।
পরিশেষে, ব্যাংকিং খাতের সংকটের পেছনে যুক্তিগত কারণের সার সংক্ষেপ হলো: দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বেদর এবং পরিচালিত (related-party) ঋণের সংস্কৃতি, দুর্নীয়ের ক্ষতি, স্বল্প পুঁজির কারণে অবনতি, ন্যূনতম তাত্ত্বিক ক্রেডিট দিকে ঝোঁক, ও শান্ত কিন্তু অর্থনৈতিক বিনিয়োগ অক্ষম ম্যাক্রো প্রেক্ষাপট। ইতিমধ্যেই রাজস্ব–লাভ থেকে ভিন্নক, বন্ধনহীন ঋণ প্রদান থেকে নিজথেকে নিরাপদ রূপে সরকারি বন্ডে রূপান্তর, আন্তর্জাতিক তহবিল গতিশীলতা, AQR ও JIT অনুসন্ধান, আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার, এবং দেউলিয়া ও সমিতিবদ্ধ আইন প্রণয়ন—সবই পুঁজি বিনিয়োগ, স্থায়িত্ব ও স্বচ্ছতা গঠনের লক্ষ্যে চালু হয়েছে।
যাইহোক, এগুলো পূর্ণাঙ্গ ফল দিতে মাস বা বছর প্রয়োজন—বিশেষ করে পুঁজির পুনর্গঠন, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ, NPL কমিয়ে ন্যূনতম ১০% CRAR অর্জন ও প্রধান্যের সঙ্গে বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণে। এটি ব্যাংকিং–অর্থনীতি–রাজনৈতিক এক জটিল সমন্বয় দাবী করে। যদি পরবর্তী ৬–১২ মাসে Prompt Corrective Action, সম্পদ গুণমান উন্নয়ন, বিনিয়োগ উন্নয়ন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়, তাহলে এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
উপরের বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে পরিবর্তনের আংশিক পথে রয়েছে—যেখানে সংকটময় অবস্থা সংস্কার ও পুনর্গঠনের চেষ্টা সামলাইতেছে। এই সংকট অব্যাহত থাকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হবে, তবে আশার আলো হলো ইতোমধ্যে প্রণীত সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে পরিবর্তনের ফলাফল দেখতে সময় ও সঠিক বাস্তবায়ন অপরিহার্য।