online news portal in bangladesh

online news portal in bangladesh:

বাংলাদেশি টাকার বিনিময় হার সময়ের সঙ্গে কিছুটা স্থিতিশীল হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এটির বিনিময় হার আন্তর্জাতিকভাবে উল্লেখযোগ্য ওঠানামা করছে। ট্রেডিং ইকোনমিক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত এক ডলারের মূল্য প্রায় ১২২ টাকা পর্যায়ে ঘোরাফেরা করেছে, যা গত মাসে কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে (১১৫–১২৩ টাকার রেঞ্জে), তবে গত ১২ মাসে প্রায় ৩.৭৬% দুর্বল হয়েছে । এটি ইঙ্গিত দেয় যে বাংলাদেশের মুদ্রা দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় একটু দুর্বল হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত হস্তক্ষেপ এবং বাজারের ইনফ্লেশনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিনিময় প্রবণতার কারণে হার কিছুটা নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরে "ক্রলিং পেগ" ব্যবস্থা চালু করেছে এবং বৃহৎ পরিমাণে ভারতেরসহীয় বাজারে টাকার বিনিময় নিয়ন্ত্রণ করছে — যার কারণে বাজারে বাই-সেলের মধ্যে এক টাকার সর্বাধিক ছড়ার সীমা নির্ধারণ করেছে । এই নীতির প্রথম ফলাফল হিসেবে মে এবং জুনে টাকার অভ্যন্তরীণ বিনিময় ব্যবস্থায় বেশ স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে, যেখানে ব্যাংকি এবং ওপেন মার্কেট উভয় ক্ষেত্রেই এক ডলারের দর প্রায় ১২২ টাকার মতোই দাঁড়িয়েছে । তবে, রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট (REER) সূচক সামান্য ওভারভ্যালুয়েশনের ইঙ্গিত দিচ্ছে—যার ফলে রপ্তানি খাত বিশেষ করে তুলনামূলক মূল্যে কিছুটা চাপে রয়েছে ।

আন্তর্জাতিক বানিজ্যের গতি একদিকে যেমন লগ্নি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহায়ক, অন্যদিকে প্রদত্ত দরিদ্র দেশীয় অবস্থা ও নীতি পরিবর্তনগুলি চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৮.৫৮% বেড়ে ৪৮.২৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সৌম্যতা, জিও‑পলিটিক্যাল উত্তেজনা এবং অভ্যন্তরীণ জনস্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান সমস্যার মাঝে বিরাট সাফল্য । বিশেষত, পোশাক খাত এই প্রবৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দিয়েছে: নিটওয়্যার আয় ২১.১৫ বিলিয়ন ডলার (৯.৭৩% বৃদ্ধি), ওভেন গার্মেন্টসে ১৮.১৮ বিলিয়ন ডলার (৭.৮২%) । তবে জুন মাসে জাতীয় রেভিনিউ বোর্ড (NBR) অফিসারদের ধর্মঘট ও কাস্টমস সেবা বন্ধ থাকায় রপ্তানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ভাবে ব্যাহত হয়েছে যার কারণে সেই মাসে রপ্তানি ৭.৫৫% কমে এসেছে — ফলে নভেম্বরের নির্ধারিত রপ্তানি বৃদ্ধির ধারাকে একটু ব্যাহত হতে দেখা যায় ।

আন্তর্জাতিক স্তরে, প্রধানত মার্কিন মুদ্রাদালের নীতির পরিবর্তন ও নতুন শুল্ক প্রস্তাব বাণিজ্য বিনিময়ে দ্বিমুখী প্রভাব ফেলছে। সাম্প্রতিক একটি রায়টার্স প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ থেকে আমদানির উপর ২৫–৪০% পর্যন্ত উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন । এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত নির্দিষ্ট হারের পরিমাণ ৩৫% । এই ঘোষণার পরই ওয়ালমার্ট এবং অন্যান্য বড় আউটলেট কয়েক লাখ পিস পোশাক অর্ডার স্থগিত করেছে যাতে করে তারা নতুন শুল্ক প্রয়োগের আগে ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারে । বাংলাদেশ-মার্কিন বাণিজ্য আলোচনায় যে অচলাবস্থা বর্তমান তা রপ্তানিতে অব্যবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। ইতিমধ্যেই ২০২৫ সালের প্রথম পয়জন মাসে বাংলাদেশের মার্কিন বাজারে রপ্তানি ২১% বেড়ে ৩.৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে—যা ক্রমবর্ধমান প্রবণতা নির্দেশ করলেও আসন্ন উচ্চ শুল্ক পরিস্থিতি শিল্পে সংকট সৃষ্টি করছে । বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নেতৃত্ব (যেমন BIDA চেয়ারম্যান) জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং বিনিয়োগ উন্নয়নে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিতে পারে ।

পারিপার্শ্বিকভাবে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য পরিবেশও উত্তেজনাপূর্ণ বিবর্তনে রয়েছে। মার্কিন শুল্ক নীতির কারণে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ডসহ আরও দেশে সহধর্মী দরপত্র কার্যকর হচ্ছে, এবং বি-আর-আই-সির দেশগুলো নতুন পৃথিবীব্যাংক করেন্সি প্রচেষ্টার কারণে প্রকৃত ১০০% শুল্কের মুখোমুখি হতে পারে । এই একতরফা উদ্যোগ বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ম ও মিত্রদেশ সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে, যার ফলে অনেক দেশ ইতোমধ্যে বিকল্প বাজার ও জোট তৈরির দিকে অগ্রসর হচ্ছে ।

দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে, BIMSTEC সম্মেলন দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। সাম্প্রতিক বন্ধনে ভারতের সাথে সড়ক ও জলপথ সংযোগ (যেমন কালাদান প্রকল্প), থাইল্যান্ড–বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ (Thailand Week 2025), এবং ফিনল্যান্ড, তুরস্কের মতো দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক বিনিয়োগবৃদ্ধি — এসব বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনছে । যেমন বাংলাদেশ-থাই চেম্বার অব কমার্স উদ্যোগে ব্যবসায়ী মিশন ও যৌথ আয়োজনে অংশগ্রহণে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে অব্যাহত দৃঢ়তা সৃষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে । মহেশখালীতে মাটারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর কার্যক্রম শুরু করলে এটি চীন, ভারত, নেপাল মতো দেশকে সরাসরি যোগাবে, আমদানি-রপ্তানির সময় ও খরচ প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দেয় — যা আগামী বছরে এই ধরনের অঞ্চলে ট্রেড ফ্যাসিলিটি উন্নতি করবে । এই প্রকল্পের ফলে বাঙালাদেশে লগিস্টিক খরচ কমবে, রপ্তানির প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে ও GDP‑তে অবদান বাড়বে আনুমানিক ২–৩% ।

জাতীয় নেতাদের তরফে, অনাকাঙ্ক্ষিত শুল্ক হুমকি থেকে রেহাই পেতে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় ব্যস্ত রয়েছে। সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করছে ইতিমধ্যেই, যেখানে মার্কিন বাজারে সুবিধাজনক পরিস্থিতি বজায় রাখার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হচ্ছে । এছাড়া বিশেষ ভাবে আফ্রিকা, ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার বাজারগুলোতে শুল্কবিপর্যয় থেকে ব্যাপক প্রতিকার হিসেবে কৌশলগত পন্থা গ্রহণ করা হচ্ছে । HSBC‑এর একটি সাম্প্রতিক সার্ভেতে বাংলাদেশের ফার্মগুলো জানিয়েছে, যদিও বিশ্বব্যাপী শুল্ক চাপ কিছুটা অনুভূত হচ্ছে, তবে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সরবরাহ শৃঙ্খল, ডেটা অ্যানালাইটিক্স ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি সীমিত করতে সক্ষম হয়েছে ।

তবে ভূ–রাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ২০২৫ সালের মে‑জুনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ধর্মঘট সাময়িক ভাবে সামুদ্রিক বন্দর ও কাস্টমস সেবায় গুরুতর ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, দৈনিক প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যিক ক্ষতি হয়েছে । এই বাধা রূপ নেয় রপ্তানির মূল সময়সূচি বিঘ্নিত করে এবং আন্তর্জাতিক অর্ডার হারানোর ঝুঁকি তৈরি করে । তবে এই সংকট সরকার–ব্যবসায় অংশীদার উদ্যোগে দ্রুত সমাধান লাভ করে, বর্তমান সরকারের Essential Services ঘোষণা ও আলোচনার মাধ্যমে । অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদে NBR‑এর অধিকার পুনর্বিন্যাস ও ডিজিটালাইজেশন জরুরি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ।

উপসংহারে, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মুদ্রা বাজার ও আন্তর্জাতিক বানিজ্য জ্যামিতিকভাবে জটিল অর্থনৈতিক পরিবর্তন-পরিপ্রেক্ষিতের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে টাকার সাময়িক দুর্বলতা রপ্তানিতে অগ্রাধিকার এনে দিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সহায়ক, অন্যদিকে আমদানিতে চাপ সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে, মার্কিন শুল্ক হুমকি এবং বিশ্ব-বাণিজ্যের নতুন নিয়ম দুরবস্থার সৃষ্টি করছে। তবে জাতীয় নেতৃত্বের ಕ್ರিয়াশীল প্রতিষেধক, বন্দর সংযোগ উন্নয়ন, বৈশ্বিক বাজারে অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি ও নীতিগত সংস্কারের পদক্ষেপ এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। দীর্ঘমেয়াদে, রপ্তানি বৈচিত্র্য, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বাজার-ভিত্তিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে বাংলাদেশ সম্ভবত এই সংকটকে রূপান্তর করে আরও শক্তিশালী ও টেকসই বাণিজ্য কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم